নিজস্ব প্রতিবেদক, দুর্গাপুর
রাজশাহীর দুর্গাপুরে নববধূ মেহেরুন হত্যাকারী মাদকসেবী স্বামীর ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। মানববন্ধনে হত্যাকারী মাদকসেবী স্বামী হিমেলকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নেওয়ার দাবী জানিয়েছে বক্তারা।
গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় উপজেলার পালী বাজার সংলগ্ন শিবপুর-দুর্গাপুর প্রধান সড়কে এলাকাবাসীর আয়োজনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে উপস্থিত এলাকাবাসী, মাদকসেবী স্বামী হিমেলকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে সব্বোর্চ শাস্তি ফাঁসির দাবী জানিয়েছেন বক্তারা। মানববন্ধনে মেহেরুনের পিতা মাহাবুর রহমান, মাতা লাইলী বেগম, বড়ভাই মকিদুর রহমান সম্রাট, চাচা সাবেক ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কৃষিবিষয়ক সম্পাদক বাকীউল আলম লিটন মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধনে এলাকার প্রায় দুইশতাধিক নারী পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত নিহত মেহেরুনের মা লাইলী বেগম বলেন, প্রায় আড়াই মাস পূর্বে উপজেলার চৌবাড়ীয়া গ্রামের তৈয়ব আলী মহরীর পুত্র হিমেল এর সহিত জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের মাহাবুর রহমানের কন্যা মেহেরুন (১৯) এর আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হহয়
বিয়ের কিছুদিন পরে গৃহবধূ মেহেরুন জানতে পারে তার স্বামী মাদকাসক্ত। স্বামীকে এই পথ থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ করেন গৃহবধূ মেহেরুন। মাদকসেবী স্বামী হিমেল মেহেরুনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবী করলে এ বিষয়য়ে মেহেরুন কিছু বলতে চাইনা। টাকা প্রাপ্তির আশায় প্রতিদিন নেশাগ্রস্থ অবস্থায় বাড়ী ফিরে কারনে অকারনে শাররীকভাবে নির্যাতন করে থাকে গৃহবধূ মেহেরুনের ওপর। বিয়ের এক মাস পর মাদকসেবী স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে বাবার বাড়ী চলে আসে মেহেরুন। বাড়ীতে এসে সব ঘটনা ঘুলে বলে মা কে। এর এক সপ্তাহ পর শশুর স্বামী হিমেলের পিতা তৈয়ব আলী মহরী গৃহবধূ মেহেরুনের বাবার বাড়ীতে যায়। গৃহবধূ মেহেরুন শশুরকে বলেন, স্বামী হিমেল প্রতিদিন নেশা করে রাতে বাড়ী ফিরে অকারনে তাকে মারধোর করে। হিমেলের পিতা তৈয়ব আলী মহরী সন্তানকে শাসন করে নেশা ছাড়াবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলে শশুরের সাথে মেহেরুন স্বামীর বাড়ীতে আসে। এরপর কিছুদিন মেহেরুন হিমেলের সংসার ভালোভাবে চলতে থাকে। এক মাস পর হঠাৎ আবার নেশায় ফিরে হিমেলে। ১০ জানুয়ারী সোমবার গৃহবধূ মেহেরুন হিমেলকে নেশা ছাড়তে বলে, নাহলে সে বাবার বাড়ী চলে যাবে বলে জানালে গভীর রাতে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। নির্যাতনের এক পর্যায় মেহেরুন চিৎকার দিলে পাশের ঘর থেকে শশুর শাশুড়ি এসে অবস্থা বেগতিক দেখে প্রথমে দুর্গাপুর হাসপালে এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। দুই দিন চিকিৎসার পর একটু সুস্থ হলে মেহেরুন তার মাকে ঘটনাগুলো জানায়। এর দুইদিন পরে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)তে চিকিৎসারত অবস্থায় গত রোববার ভোর তিনটার দিকে না ফেরার দেশে চলে যায় নববধূ মেহেরুন। এঘটনায় রাজপাড়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। রোববার ময়না তদন্ত শেষে পিতার নিজ পারিবারিক কবরাস্থানে দাফন সম্পূর্ন হয় মেহেরুনের। এদিকে মেহেরুনের মৃত্যুর খবরে স্বামী হিমেলের পরিবারের সকলে বাড়ী থেকে পালিয়ে গেছে। মেহেরুনের পিতা মাহাবুর রহমান বলেন, নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে মামলা করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।এবিষয়ে দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাশমত আলী বলেন, বিষয়টি শুনেছি মাত্র। তবে এবিষয়ে রাজপাড়া থানায় ইউডি মামলা হয়েছে। দুর্গাপুর থানায় কেউ এ বিষয়ে মামলা বা অভিযোগ করতে আসেনি। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। #
মোবারক হোসেন শিশির
দুর্গাপুর,রাজশাহী।
১৭ জানুয়ারী ২০২২ইং