বৃহস্পতিবার ৮ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শত বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ এই কুমড়াবড়ি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করে আসছে

নিউজটি শেয়ার করুন

অনলাইন ডেস্ক:

শত বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ এই কুমড়াবড়ি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করে আসছে কারিগররা। খট্টেশ্বর গ্রামের ২০-২৫টি পরিবারের মানুষ পৈতৃক এই পেশাটিকে ধরে রেখেছে। সারা বছর টুকটাক বড়ি তৈরি হলেও শীত মৌসুমে এই কুমড়াবড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায় ।

নওগাঁর রানীনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কুমড়াবড়ি তৈরির ধুম পড়েছে। এই বড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী-পুরুষ কারিগররা। রানীনগরের কুমরাবড়ি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। শীতকালই হচ্ছে এই বড়ি তৈরির মৌসুম। উপজেলার সবচেয়ে বেশি সদর ইউনিয়নের খট্টেশ্বর গ্রামে এই সুস্বাদু বড়ি তৈরি করা হয়ে থাকে।

জানা গেছে, অনেক সকাল থেকেই বাড়ির উঠানে উঠানে ও বিভিন্ন জায়গায় চলে কুমড়াবড়ি তৈরির কাজ। বাড়ির গৃহিণী থেকে শুরু করে পুরুষ এবং ছোট-বড় ও বয়স্ক সবাই মিলে তৈরি করেন এই বড়ি। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে রোদ মাখানো স্থানে চাটাইয়ে সারি সারি করে বিছানো সাদা রঙ্গের মাসকালাইয়ের তৈরি কুমড়াবড়ি। কেউ কেউ আবার শুকনো বড়িগুলো বাঁশের চাটাই থেকে খুলছে। শত বছরের ঐতিহ্যপূর্ণ এই কুমড়াবড়ি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করে আসছে কারিগররা। খট্টেশ্বর গ্রামের ২০-২৫টি পরিবারের মানুষ পৈতৃক এই পেশাটিকে ধরে রেখেছে। সারা বছর টুকটাক বড়ি তৈরি হলেও শীত মৌসুমে এই কুমড়াবড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। বর্তমানে ওই গ্রামের কারিগররা এই সুস্বাদু বড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীত মৌসুমে এই বড়ির চাহিদা বেশি থাকায় এখন ওই গ্রামে কারিগরদের মধ্যে চলছে প্রতিযোগিতা। এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কুমড়াবড়ি তৈরি হয়ে থাকে। তবে খুব সীমিত। দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে।

কিন্তু বড়ি তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমে গেছে।  বড়ি তৈরির কারিগর সুবল চন্দ্র সরকার জানান, বড়ি তৈরির সব উপকরণই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার পণ্য। বড়ি তৈরিতে প্রথমে মাসকালাই পানিতে ভিজিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে মেশিনে ভেঙে গুঁড়া করে আবার তা পানি দিয়ে ভিজিয়ে রুটি তৈরির আটার মতো অবস্থায় পরিণত করা হয়। এরপর এর সঙ্গে চাল কুমড়া পিষিয়ে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে বড়ি তৈরি করা হয়। এরপর তা ২-৩ দিন রোদে ভালোভাবে শুকানোর পর বিক্রয় করা হয়। বড়িকে শক্তিশালী করার জন্য এর সঙ্গে খুব কম পরিমাণে আলো চালের আটা মেশানো হয়। প্রতি কেজি মাসকলাই থেকে প্রায় ৬ থেকে ৭০০ গ্রাম কুমড়াবড়ি তৈরি হয়।

এই বড়ি মূলত মাসকলাই, চাল কুমড়া, জিরা, কালোজিরা, মোহরি দিয়ে তৈরি করা হয়। যে কোনো রান্না করা তরকারির সঙ্গে এই কুমড়াবড়ি রান্না করা যায়। আর রান্নায় এই বড়ি যোগ করে অন্য রকমের স্বাদ। হাটখোলাপাড়া গ্রামের বড়ি তৈরির কারিগর বলায় চন্দ্র জানান, কুমড়াবড়ি তৈরি আমাদের বাপ-দাদার পেশা। প্রতি কেজি বড়ি ২২০-২৫০ টাকা (বড় আকারের) এবং ১২০-১৫০ টাকা (ছোট আকারের) করে খুচরা ও পাইকারি বিক্রয় করা হয়। নিজ এলাকার প্রয়োজন মিটিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, রংপুর ও দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই কুমড়াবড়িগুলো সরবরাহ করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিয়তই পাইকাররা আমাদের কাছ থেকে এই বড়ি কিনে নিয়ে যায়। এ ছাড়া আমরা স্থানীয় বিভিন্ন হাটেও খুচরা বিক্রি করি। তবে বড়ি তৈরির উপকরণের দাম বেশি হওয়াই লাভ সীমিত। একই গ্রামের বড়ি তৈরির কারিগর মিঠুন কুমার সরকার ও জয় কুমার জানান, আমরা নিম্নআয়ের কিছু মানুষ ঐতিহ্যপূর্ণ এই পৈতৃক পেশাটিকে আজও ধরে রেখেছি। আমরা বিভিন্ন এনজিও-সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে কোনোমতে এই শিল্পটাকে ধরে রেখেছি।

যার কারণে আমাদের ইচ্ছে থাকলেও এই শিল্পটাকে প্রসারিত করতে পারছি না কারণ আমাদের পুঁজি কম। আমরা সরকারি সহযোগিতা বা কম সুদে যদি ঋণ পেতাম তাহলে বড় ধরনের অর্থ খাটিয়ে এই শিল্পটাকে আরও অনেক বড় করতে পারতাম। আগের তুলনায় এখন বড়ি তৈরির উপকরণের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় লাভ অনেকটাই কমে গেছে। তবু শত কষ্টেও বাপ-দাদার এই পেশাটি আমরা ধরে রেখেছি। খট্টেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান পিন্টু জানান, এই গ্রামের তৈরি কুমড়াবড়ির সুনাম রয়েছে।

অনেক দূর-দূরান্তের মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা এসে এই গ্রাম থেকে কুমড়াবড়ি নিয়ে যান। তবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত নিম্ন আয়ের মানুষ যদি সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেত তাহলে এই শিল্পটি আরও প্রসারিত হতো। আরও অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো বলে মনে করছেন তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কুমড়াবড়ি তৈরি হয়। কিন্তু খট্টেশ্বর গ্রামটিতেই অনেক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে কুমড়াবড়ি তৈরি করা হয়ে থাকে বলে আমি শুনেছি। তবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত এখানকার কারিগররা যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাহলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা তাদের যথাসাধ্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।

এই বিভাগের আরও খবর

নারীর অগ্রযাত্রায় যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতার আশ্বাস

নিউজটি শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুনঅনলাইন ডেক্সঃ নারীর অগ্রযাত্রায় যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন যুক্তরাজ্য সরকারের পার্লামেন্ট অব দ্য ইউনাইটেড কিংডমের সদস্য হেলেন গ্রান্ট। সোমবার (২২

শিপুল আক্তারের মাছের পিঠা

নিউজটি শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুনঅনলাইন ডেক্সঃ বিয়ের আগে থেকে হেঁশেলের সঙ্গে সখ্য শিপুল আক্তার খানমের। ১৯৯৮ সালে তাঁর বিয়ে হয় ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌরসভার ভূঁইয়াপাড়া মহল্লার মো. কামরুজ্জামান

মৌসুম ছাড়াই হলুদ তরমুজ চাষে আগ্রহী কৃষকরা

নিউজটি শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুনঅনলাইন ডেস্ক: উপরে হলুদ আর ভেতরে টকটকে লাল, স্বাদে মিষ্টি ও সুস্বাদু তরমুজ ঝুলছে কৃষকের মাচায়। অসময়ের তরমুজ বলে দামও বেশ চড়া। দৃষ্টিনন্দন

মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বৃক্ষরোপন কাজের উদ্বোধন, বিএমডিএর চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান

নিউজটি শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুনরাজশাহী নিউজ টুডে   মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) পরিচালিত ‘‘ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বৃহত্তর

একজন সাধারণ মানুষের অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প…

নিউজটি শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুনঅনলাইন ডেস্ক   গ্রামের হিমেল বাতাস গায়ে মেখে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে বেড়ে ওঠা এক কিশোরের নাম মোস্তফা কামাল। জন্ম ১৯৫৫ সালে, কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার

চালু হলো কৃষিপণ্যের বেচাকেনায় সরকারি অ্যাপ ‘সদাই’

নিউজটি শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুনঅনলাইন ডেস্ক   স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে কৃষিপণ্যের বেচাকেনায় ভোক্তা, কৃষক, উদ্যোক্তা, কৃষি ব্যবসায়ীদের জন্য অ্যাপ চালু করেছে সরকার। কৃষি বিপণন অধিদফতরের এ

%d bloggers like this: