অনলাইন ডেস্ক
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ছোট কুমিরা এলাকায় তুলার গুদামে লাগা আগুন ৩০ ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে। রবিবার (১২ মার্চ) বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে আগুন সম্পূর্ণভাবে নেভাতে সক্ষম হন ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বিজিবির কর্মীরা।
এর আগে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই তুলার গুদামে আগুন লাগে। মুহূর্তের মধ্যে পুরা গুদামে ছড়িয়ে পড়ে। এটি এসএল গ্রুপের মালিকানাধীন ইউনিটেক্স তুলার গুদাম।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিক জানাতে পারেননি তিনি।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘তুলার গুদামের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে ওই স্থানে সতর্ক অবস্থায় থাকবে ফায়ার সার্ভিস। অধিকতর সতর্কতার অংশ হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের একটি পানিভর্তি ট্রাক ঘটনাস্থলে কয়েকদিনের জন্য রাখা হয়েছে। আগুন দেখলেই পানি ছিটানো হবে।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিস এককভাবে নিয়ন্ত্রণের কাজ করেছিল। তবে শনিবার রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও বিজিবি। সব সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিসের ৯, সেনাবাহিনীর চার, নৌবাহিনীর চার, বিমান বাহিনীর দুই এবং বিজিবির চারটি ফায়ার ফাইটিং ইউনিটসহ ২৩টি ইউনিট কাজ করেছে।’
ইউনিটেক্স কারখানার গুদামে দুই হাজার ৭০০ টন তুলা ছিল উল্লেখ করে তৌহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘তুলার পরিমাণ বেশি হওয়ায় এক অংশে আগুন নির্বাপণের পর নিচ থেকে আগুন অপর অংশে ছড়িয়েছে। প্রায় ১০ একর আয়তনের এই গুদামের চারদিকের দেয়াল ভেঙে পানি ছিটানো হয়। অগ্নিনির্বাপণে পানি ব্যতীত অন্য কোনও রাসায়নিক বা পাউডার ব্যবহার করার উপায় ছিল না। এমনকি এত পরিমাণ পানি আশপাশে পাওয়া যায়নি। যার কারণে ক্যান্টনমেন্ট, ভাটিয়ারি, বাড়বকুণ্ডসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পানি আনা হয়। ঘটনাস্থলের আশপাশের খাল ও পুকুরের পানি শেষ হয়ে গেছে।’
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো গুদামটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গুদামের সব তুলা ও জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুন নেভাতে ভবনের দেয়াল ও অবকাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছে।
কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘আশপাশের পুকুর ও খালে অল্প পরিমাণ পানি ছিল। পাম্প লাগানোর কিছুক্ষণের মধ্যে পানি কমে এলে স্থানীয় লোকজন মাছ ধরতে নেমে যান। এতে পানি ঘোলা হয়ে যায়। পরে একাধিক স্থান থেকে পানি আনা হয়।’
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে এসএল গ্রুপের গুদামটিতে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওয়েল্ডিংয়ের আগুন থেকেই অগ্নিপাতের সূচনা হয়েছে।’
এর আগে গত ৪ মার্চ বিকালে সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাত জন নিহত হন। দগ্ধ ও আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন।