বৃহস্পতিবার ৮ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

১০ বছর পর লাভের মুখ দেখলেন মুন্সিগঞ্জের আলুচাষিরা

নিউজটি শেয়ার করুন

অনলাইন ডেস্ক

মুন্সিগঞ্জে এবার মৌসুমের শুরু থেকে আলুর বাজার মোটামুটি ভালো ছিল। মাসখানেক ধরে আলুর দাম আরও বেড়েছে। তাই এখন হিমাগার থেকে আলু বের করে বিক্রির ধুম পড়েছে। এতে প্রায় ১০ বছর পর আলু চাষে লাভের মুখ দেখছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
মুন্সিগঞ্জ আলু চাষের জন্য বিখ্যাত। এখান থেকে ফরিদপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ভোলা, বরিশাল, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা খুচরা বাজারে বিক্রির জন্য আলু কিনে নিয়ে যান। এখানকার চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১০ বছর ধরে তাঁরা আলু চাষ করে লাভ করতে পারেননি। গত কয়েক বছর পুঁজিও ফেরত পাননি। তবে এবার আলু বিক্রি করে তাঁরা খুশি।
জেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জে ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, এস্টারিকসসহ ১০ জাতের আলুর চাষ হয়। ২০১৭ সালে এখানে ৩৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়। ২০১৮ সালে চাষ হয় ৩৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। গত বছর ৩৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করেন চাষিরা। এ বছর চাষ হয়েছে ৩৭ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে, যা গত তিন বছরের তুলনায় কম। এ বছর জেলাটিতে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১৩ লাখ ২ হাজার ২৭ মেট্রিক টন। তবে উৎপাদন কম হলেও এবার দাম ভালো পাচ্ছেন চাষিরা।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আলুর চাষ কম হয়েছে। বন্যায় অন্যান্য সবজির অনেক ক্ষতি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আলুর ওপর। তাই দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার মুন্সিগঞ্জ বড়বাজার, মুন্সিরহাট, মুক্তারপুর, রিকাবীবাজার, বৌবাজার, দয়ালবাজার, সিরাজদিখান, টঙ্গিবাড়ী বাজারসহ ১০-১২টি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, এস্টারিকস উচ্চফলনশীল জাতের আলু খুচরা বাজারে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ঈদের পর কোল্ডস্টোরেজ থেকে আলু বের হতে শুরু করেছে। গত বছর যে আলু প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার সেই বস্তা ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকের লাভ থাকছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, এবার ৩৫ টাকা দরে ৫০ কেজির বস্তা ১ হাজার ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এ সময়ে বস্তা সাত থেকে সাড়ে আট শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বাজারে আলুর দাম বাড়ায় কৃষকেরাও লাভ পাচ্ছেন। হিমাগার থেকে আলু বের করে এনে বাজারে তুলছেন তাঁরা।
সদর উপজেলার নয়াপাড়া এলাকার চাষি রওশরাজ সরকার। তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে আলু চাষ করছেন তিনি। শুরুর দিকে আলুতে লাভ হলেও ১০ বছর ধরে ধারাবাহিক লোকসান গুনছেন। এবার ছয় শ টাকা দরে কিনে ২ হাজার বস্তা ও জমির ৩ হাজার বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছেন। হিমাগারে বস্তাপ্রতি খরচ ১৮০ টাকা। তবে সব খরচ বাদে এবার বস্তাপ্রতি ছয় শ টাকার ওপর লাভ হচ্ছে।
যুগনীঘাট এলাকার সাইফুল ইসলাম বললেন, ‘গেল কয়েক বছর আলু চাষ করে অনেক লোকসান গুনছি। এবার ৫ একর জমির আলু বিক্রি করে প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ করছি।’
টঙ্গিবাড়ীর আলু ব্যবসায়ী ফারুখ খান বলেন, মৌসুমের শুরুতে ৭০০ টাকা দরে ১০ হাজার বস্তা আলু কিনেছিলেন। পুরোটাই হিমাগারে রাখেন। দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ১৫ দিন আলু বিক্রি করেছেন। খরচ ও হিমাগারের ভাড়া বাদ দিলেও তাঁর প্রতি বস্তায় সাড়ে পাঁচ শ টাকা লাভ থাকছে।

সদর উপজেলার কয়েকটি হিমাগারে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা পচা আলু বাছাই করে ভালো আলু বস্তায় ভর্তি করছেন। কেউ বস্তা ওজন করছেন। কেউ আলুর বস্তা ভর্তি করে ট্রাক, ট্রলারসহ যানবাহনে তুলে দিচ্ছেন।
দেওয়ান কোল্ডস্টোরেজের মালিক আরশ দেওয়ান বলেন, গত ১০ বছর আলু চাষ করে কৃষকেরা লাভের মুখ দেখেননি। অনেকবার তো কোল্ডস্টোরেজে আলু ফেলেই কৃষকেরা চলে গেছেন। অনেক কৃষক আলু ছেড়ে অন্য ফসল চাষ করছেন। তবে এবার আলুর চাষ কম হয়েছে। বন্যা ও কয়েকবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে অন্য সবজি নষ্ট হয়েছে। তাই বাজারে আলুর চাহিদা বেশি। এ বছর মৌসুমের শুরু থেকে আলুর দাম মোটামুটি ছিল। তবে এখন বাজার বেশ চড়া। তাই স্টোরেজের ক্রেতা-বিক্রেতারা সরব হয়ে উঠেছেন।

গেল কয়েক বছর আলু চাষ করে অনেক লোকসান গুনছি। এবার ৫ একর জমির আলু বিক্রি করে প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ করছি।

কদম রসূল স্টোরেজের হিসাবরক্ষক মো. শাহীন বলেন, কোরবানির ঈদের পর কোল্ডস্টোরেজ থেকে আলু বের হতে শুরু করেছে। গত বছর যে আলু প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার সেই বস্তা ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে হিমাগারের ভাড়া দেওয়ার পরও কৃষকের মোটা অঙ্কের লাভ থাকছে।
জানতে চাইলে জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, মুন্সিগঞ্জের মাটি ও আবহাওয়া আলু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সরকার আলুভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে এবং বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে দেশ আরও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করবে।

সূত্র  প্রথম আলো

এই বিভাগের আরও খবর

লালমাই পাহাড়ে মিষ্টি আমের মেলা

নিউজটি শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুন    কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে বাড়ছে মিষ্টি আমের চাষ। পাহাড়ের বড় ধর্মপুর, বারপাড়া, রতনপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে নানা জাতের আম।

গুরুদাসপুরে ১০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা

নিউজটি শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুনঅনলাইন   উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে জমে উঠেছে উত্তরবঙ্গের বৃহৎ লিচুর মোকাম নাটোরের গুরুদাসপুরের বেড়গঙ্গারামপুর কানুমোল্লার বটতলা। লিচুর আড়তগুলোতে টসটসে লিচু সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে।

পোকার আক্রমণে ধান সাদা হয়ে হেলে পড়ছে মাটিতে

নিউজটি শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুনঅনলাইন   ফেনীর পরশুরামে বোরোর পাকা ধানে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। জমি থেকে যখন ধান কেটে ঘরে তোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, ঠিক তার

কুমিল্লার মাঠে ভুট্টার সোনালি হাসি

নিউজটি শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুনঅনলাইন   কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার মাঠে ভুট্টার সোনালি হাসি ছড়িয়ে পড়েছে। জেলার দাউদকান্দি, চান্দিনা, বরুড়া, লালমাইসহ বিভিন্ন উপজেলার মাঠে সোনালি রঙের ভুট্টা আবাদ

বীজের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় দেশি বীজ সুরক্ষার ডাক গ্রামের কৃষক- কৃষাণীদের

নিউজটি শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুন ফসল উৎপাদনে কৃষক-কৃষাণীর যে বিষয়টির অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো বীজ। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো কৃষি। কিন্তু দিনে দিনে

সুগন্ধি ধানের চাষ বাড়ছে

নিউজটি শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুনঅনলাইন   রংপুর অঞ্চলে বিশেষ জাতের ধান থেকে তৈরি সুগন্ধি চাল কৃষি ক্ষেত্রে নতুন বিপ্লব ঘটিয়েছে। মাত্র ৭ বছরে এই ধানের উৎপাদন বেড়েছে

%d bloggers like this: