নিজস্ব প্রতিবেদক : লো লিফ্ট পাম্প (এলএলপি) ও পাতকুয়া স্থাপনে এখন চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছে। রাজশাহীর পবার হরিপুর ইউনিয়নের চরমাঝারদিয়াড়ে এরই মধ্যে সবজি চাষসহ ফলের আবাদে ঝুকেছে চাষিরা।
সোমবার দুপুরে একটি এলএলপি ও ছয়টি পাতকুয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। এসময় উপস্থিত ছিলেন
বিএমডিএ’র প্রকল্প পরিচালক (এসডাব্লুউআইপি) শরীফুল হক, পবা উপজেলা বিএমডিএ’র সহকারি প্রকৌশলী এএসএম দেলোয়ার হোসেন, উপ সহকারি প্রকৌশলী রাহাত পারভেজ, হরিপুর ইউপির চেয়ারম্যান বজলে রেজবি আল হাসান মুঞ্জিল প্রমুখ। প্রায় সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এসব পাতকুয়া ও এলএরপি। যা সম্পূর্ণ সোলার সিস্টেমে (সৌর বিদ্যুতে) চলবে।
পদ্মা নদী থেকে এই এলএলপি’র মাধ্যমে চরএলাকার তিনশো’ থেকে পাঁচশো’ বিঘা জমিতে সেচ সুবিধা পাবে চাষিরা। এছাড়াও প্রতিটি পাতকুয়া থেকে সেচ দিয়ে সবজি আবাদ করা যাবে ৩০-৩৫ বিঘা জমিতে। বিশেষ করে পাতকুয়া থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ পাচ্ছেন কৃষক
পরিবার। এছাড়াও পতিত কৃষি জমিতে সেচ দিয়ে চাষাবাদ করতে পারছেন তারা। ফলে একদিকে যেমন বিশুদ্ধ খাবার পানি পাচ্ছেন এবং অন্যদিকে সবুজ হচ্ছে পতিত জমি। আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।
রাজশাহীর পদ্মা নদীর ওপারে পবা উপজেলার চর মাঝারদিয়াড়। এতদিন সুপেয় পানি ও সেচের পানির জন্য গ্রীষ্মকালে ব্যাপক সমস্যা হতো এই চরএলাকার মানুষের। তবে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে পাতকুয়া থেকে পানি পাওয়ায় সেই
চর অঞ্চলে এখন পানির সমস্যার সমাধান হয়েছে। তারা এখন জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, লাউ, মরিচ চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, টমেটো, আলু, আবাদের জন্যও পানি পাচ্ছে চর অঞ্চলের মানুষ। সবজি আবাদের পাশাপাশি তারা ফলের আবাদে মেতেছে। বিশেষ করে আম, পেয়ারা ও কলা চাষ করছেন। চরের এই বিষমুক্ত ফলের চাহিদা, মান ও দাম সবই বেশী। কাজেই চাষিরা এখন ফলের আবাদ করে লাভবান হচ্ছে।
পবার হরিপুরের চর মাঝারদিয়াড়ে সুপেয় পানি ও সেচের জন্য এলএলপি (নদী থেকে পানি উঠানো) এবং সোলার প্যানেলের মাধ্যমে পাতকুয়া থেকে পানি উত্তোলন বেশ কিছুদিন আগে থেকেই পর্যবেক্ষণ মূলক চালু আছে। আর এতেই চরবাসীর জীবনমান, সবুজায়ন ও আবাদের পরিমান বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। বরেন্দ্র বহুমূখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ পাতকুয়ার সফলতা নিয়ে এখন অনেক আশাবাদি হয়ে উঠেছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চরের বাসিন্দারা এখন খাবার পানি সংগ্রহ করছেন
পাতকুয়া থেকে। সেখান থেকে কৃষি জমিতে সেচ দিয়ে ফলানো হচ্ছে নানা জাতের সবজি।
স্থানীয় ইউপি’র চেয়ারম্যান বজরে রেজবি আল হাসান মুঞ্জিল জানান, চরাঞ্চলে খাবার পানির সমস্যা প্রকট ছিলো। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে পানি পাওয়া যেত না। হাতকলেও তেমন পানি মিলতো না। এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। এলএলপি ও পাতকুয়া স্থাপনে তাদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। পাতকুয়ার কারনে সহজেই মিলঝে খাবার বিশুদ্ধ পানি। আবার চাষাবাদও হচ্ছে কৃষি জমি।
বিএমডিএ রাজশাহীর প্রকল্প পরিচালক (এসডাব্লুউআইপি) শরীফুল হক বলেন, ‘পাতকুয়া ব্যবহারের সুফল অনেক। এটি ব্যবহারে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমবে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে যত বেশি গভীর নলকূপের ব্যবহার কমানো যায় ততই ভাল। এছাড়া খরার সময় খরাপ্রবণ এলাকায় স্বল্প সেচের ফসল উৎপাদন ধরে রাখা যায়। বিশেষ করে আগাম শিম, লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, পেঁপে, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, আলু, করলা, শসা এসবের আবাদের জন্য এখন পাতকুয়া নির্ভরশীল হয় উঠেছে। প্রতিটি পাতকুয়ায় ব্যয় হয়েছে ১৩ লাখ টাকা এবং একটি এলএলপিতে ব্যয় হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা।