অনলাইন
মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহনে ভারতকে কী পরিমাণ মাশুল দিতে হবে তা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভারতীয় পণ্য পরিবহণে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সংক্রান্ত একটি স্থায়ী আদেশ জারি করে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের ফি ও রুট নির্ধারণ করেছে। গত এপ্রিলে জারি করা এ আদেশ রবিবার (২১ মে) গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
কাস্টমস নিরীক্ষা, আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক সদস্য ড. আব্দুল মান্নান শিকদার সই করা এই প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
আদেশের তথ্য অনুযায়ী পণ্য পরিবহনে ভারতকে টনপ্রতি ২২০ টাকা ফি দিতে হবে। এর মধ্যে টন প্রতি ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ২০ টাকা, সিকিউরিটি চার্জ ১০০ টাকা ও প্রশাসনিক চার্জ ১০০ টাকা। এর বাইরেও প্রতি চালানের ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, কনটেইনার স্ক্যানিং ফি ২৫৪ টাকা এবং প্রতি কিলোমিটারে এসকর্ট চার্জ ৮৫ টাকা দিতে হবে। এছাড়া নির্ধারিত পরিমাণ ইলেকট্রিক লক অ্যান্ড সিল ফি এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত টোলসহ সড়ক ব্যবহারের মাশুল দিতে হবে। মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) দিতে হবে ১৫ শতাংশ হারে। নির্দিষ্ট রুটের বাইরে অন্য রুটে ট্রানজিটের পণ্য পরিবহন করা যাবে না।
আদেশে বলা হয়েছে, ট্রানজিট অপারেটর হিসাবে তালিকাভুক্তির জন্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মোংলা ও চট্টগ্রাম কাস্টমসে আবেদন করতে হবে। আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের ১০ হাজার টাকা অফেরতযোগ্য ট্রেজারি চালান, ১০ লাখ টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি এবং ৫০ লাখ টাকা রিস্ক বন্ড জমা দিতে হবে। ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য সাত দিনের মধ্যে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রমে ব্যর্থ হলে পণ্যের শুল্ক-করের জরিমানা অপারেটরকে দিতে হবে। প্রাকৃতিক কারণে পণ্য নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে বা যানবাহন নষ্ট হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেট অফিসকে বিস্তারিত জানিয়ে চিঠি দিতে হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের চালান স্ক্যানিং করা হবে। এরপর ইলেকট্রনিক সিল লক লাগানো হবে। স্ক্যানিংয়ে অসঙ্গতি পাওয়া গেলে পণ্যের কায়িক পরীক্ষা করা হবে।
যেসব রুটে পণ্য পরিবহণ
উভয়মুখী ৮টি রুটে পণ্য পরিবহণ করা যাবে। এগুলো হলো— চট্টগ্রাম/মোংলা বন্দর-আখাউড়া-আগরতলা; চট্টগ্রাম/চট্টগ্রাম/মোংলা বন্দর-তামাবিল-ডাউকি; চট্টগ্রাম/মোংলা বন্দর-শেওলা-সুতারকান্দি; চট্টগ্রাম/মোংলা বন্দর-বিবিরবাজার-শ্রীমন্তপুর; আগরতলা-আখাউড়া-চট্টগ্রাম/মোংলা বন্দর; ডাউকি-তামাবিল-চট্টগ্রাম/মোংলা বন্দর; শেওলা-সুতারকান্দি-চট্টগ্রাম/মোংলা বন্দর এবং শ্রীমন্তপুর-বিবিরবাজার-চট্টগ্রাম/মোংলা বন্দর।
জানা গেছে, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে Agreement on the use of Chattogram and Mongla Port for Movement of Goods to and from India এর আওতায় ২০১৮ সালে উভয় দেশের মধ্যে Standard Operating Procedure (SOP) স্বাক্ষরিত হয়।
পরে ২০২০ সালের জুলাই মাসের চুক্তির অধীনে প্রথম ট্রায়াল রান লোহার রড এবং ডাল বোঝাই চারটি কন্টেইনারে কলকাতার হলদিয়া বন্দর থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে পরিবহন করা হয়েছিল।
ভারত-বাংলাদেশ প্রোটোকল রুটের মাধ্যমে চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দরকে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য চতুর্থ এবং চূড়ান্ত ট্রায়াল রান ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর শেষ হয়েছিল।
চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের যোগ সৃষ্টির ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য আনা-নেওয়ায় দেশটির সময় ও খরচ দুটোই কমবে। পাশাপাশি বাংলাদেশও বড় অংকের রাজস্ব পাবে।