রাজশাহী নিউজ টুডে: রাজশাহীর মসজিদ মিশন একাডেমিতে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংষ্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ। সোমবার সন্ধ্যায় দেয়া এই যুক্ত বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে পাঁচটি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দাবি জানানো হয়েছে।
এর আগে বিকালে নেতৃবৃন্দ রাজশাহী নগরীর শাহমখদুম কলেজে একটি সভা করেন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবদুল মান্নান। ওই সভা থেকে মসজিদ মিশন একাডেমির দুর্নীতি ও সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড এবং জামায়াতি রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধে পাঁচটি দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
ওই সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির রাজশাহী মহানগরের সভাপতি এনামুল হক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, বাসদের রাজশাহীর সমন্বয়কারী আলফাজ হোসেন, জাসদের সহসভাপতি সাবিয়ার রহমান, রাজশাহী মহানগরের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনী, রাজশাহীর সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সাইদুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদের মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক কুমার, সম্মিলিত সাংষ্কৃতিক জোটের রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার ঘোষ, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এসএম রেজাউল ইসলাম, রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগারের সভাপতি আবদুল লতিফ চঞ্চল, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামারউল্লাহ সরকার, ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন মাসুদ, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল ও আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরামের রাজশাহী মহানগরের সভাপতি নিতাই কুমার সরকার।
যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, মসজিদ মিশন সংস্থার দ্বারা পরিচালিত মসজিদ মিশন একাডেমিতে কোন হিন্দু, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় না। এখানে অমুসলিম ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ নেই। শুধুমাত্র জামায়াত-শিবিরের দলীয় ক্যাডারদের প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক-কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এটি বাংলাদেশের শিক্ষানীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থি। তাই মসজিদ মিশনের এই নিয়ম ভেঙে দিতে হবে। সেখানে অন্য ধর্মেরও শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি সরকারের আইন অমান্য করে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে অনুমোদনহীন কমিটির দ্বারা সংস্থাটি কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং আইন অমান্য করে রজাশাহী শিক্ষাবোর্ড থেকে বিশেষ কমিটি গ্রহণের সুযোগ নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে প্রতারণা করছে। এ বিষয়ে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এদিকে সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত মসজিদ মিশন কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক মাওলানা সিরাজুল ইসললাম ছাত্রী কেলেঙ্কারির অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সংস্থাটির কার্যক্রম চালু রাখলে এ রকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা আরও ঘটতে পারে। তাই এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মসজিদ মিশন সংসস্থা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে দান গ্রহণ করে। সরকারের অনুদান, সাদকা, জাকাত নানাভাবে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা সংগ্রহ করে যা অডিট করা হয় না। মূলত এই সংগৃহিত অর্থ জামায়াতি রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যয় করা হয়। এটি দেশের সমাজসেবা আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
এছাড়া মসজিদ মিশন একাডেমিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কতিপয় শিক্ষক জামায়াত-শিবিরের উচ্চপর্যায়ের নেতা হওয়ার কারণে সরকারবিরোধী কর্মককাণ্ডে জড়িত আছেন। তারা অধিকাংশ সময় গ্রেপ্তার থাকায় প্রতিষ্ঠানটির কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হচ্ছে। অভিভাবকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, যা এক ধরনের শিক্ষা ও নৈতিকতা বিরোধী অন্তর্ঘাতমূলক ষড়যন্ত্রের সামিল।
বিবৃতিদাতারা উল্লেখ করেছেন, মসজিদ মিশন একাডেমি রাজশাহী শহরে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এখনও পর্যন্ত জামায়াত-শিবির চক্র দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠান সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা বিভাগের প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপক দুর্নীতির বিষয়টি উঠে এসেছে। ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ১২ কোটি টাকা আত্মসাৎ চিহ্নিত হয়েছে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির সাতজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা চলমান।
এ অবস্থায় বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ মসজিদ মিশন সংস্থা বাতিল ও নিষিদ্ধ করে স্কুল ও কলেজকে সরকারের শিক্ষানীতি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধানের আওতায় পরিচালনা ও পুনর্গঠনের দাবি জানান। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে এ দাবির সমর্থনে রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্মিলিত সাংষ্কৃতির জোট ও অন্যান্য সামাজিক-সাংষ্কৃতিক সংগঠনসমূহ ব্যাপক আন্দোলন ও জনমত গঠন করেছে। বিবৃতিদাতারা এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। তারা এ দাবি বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং জোর তাগিদ দেন।