রাজধানীর উত্তরা তুরাগ থানা এলাকার দিয়াবাড়ি ১১ নম্বর ব্রিজের ঢালে বেসরকারি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের লুট হওয়া ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকার মধ্যে আংশিক উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) তাৎক্ষণিকভাবে গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমাণ প্রায় ৯ কোটি টাকা বলা হয়েছিল। এখন বলা হচ্ছে, ৯ কোটি নয়, ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, সে সময় ট্রাংক থেকে টাকা না গুণেই গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ তথ্য (৯ কোটি টাকার) জানিয়েছিলেন।
উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোরশেদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ৯ মার্চ সকাল ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে সেদিন বিকালেই রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে চারটি ট্রাংকের মধ্যে তিনটি ট্রাংক উদ্ধার করা হয়। তিনটি ট্রাংকের একটি ছিল ফাঁকা। আর একটি ট্র্যাংকে ছিল অর্ধেক ফাঁকা। আর অন্যটি ভর্তি ছিল। তিনটি ট্রাংকের টাকা গুণে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায়।’
এই ঘটনায় সিকিউরিটি কোম্পানি মানিপ্লান্ট লিংক লিমিটেডের পরিচালক আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে তুরাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি। যদিও গোয়েন্দা পুলিশ বৃহস্পতিবার সাত জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়।
মামলার এজহার সূত্রে বলা হয়েছে, চারটি ট্রাংকে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিল; যার মধ্যে ১ হাজার টাকার নোটের ৪ কোটি ৬৫ লাখ, ৫০০ টাকার নোটের ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা ছিল। মিরপুর ডিওএইচএস থেকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ সাভার ইপিজেডে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সকালে রওনা হওয়ার পর আনুমানিক সকাল ৭টা পাঁচ মিনিটে উত্তরা থানা এলাকার দিয়াবাড়ি ১১ নম্বর ব্রিজের ঢালের রাস্তায় কালো মাইক্রোবাসের একটি গাড়ি সিকিউরিটি এজেন্সির সেই গাড়িটিকে চাপ দেয়। এক পর্যায়ে গাড়িটি স্লো করতে বাধ্য হয়। পরে কালো একটি মাইক্রোবাস থেকে বেশ কয়েকজন দুর্বৃত্ত গাড়ির সামনে এসে গালিগালাজ শুরু করে এবং গাড়িতে থাকা সুপারভাইজার কামাল হোসেনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে রাস্তা থেকে সরে যেতে বলে। এ সময় মাইক্রোবাস থেকে আরও দুজন দুর্বৃত্ত নামে এবং গাড়ির চালক ওয়াহিদুজ্জামানকে গাড়ি থেকে টান দিয়ে নামিয়ে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে আর অন্য আরেকজন দুর্বৃত্ত সুপারভাইজার কামাল হোসেনকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। তখন আরও ৪-৫ জন ডাকাত মাইক্রোবাস থেকে নেমে গাড়ির দরজা লক থাকায় গাড়ির দরজা টানাটানি করে ভেঙে ফেলে এবং গাড়িতে থাকা গার্ড বিল্লাল ও ওয়াহিদুল ইসলামকে নামিয়ে এলোপাতারি কিল-ঘুষি মারতে থাকে।
এজহারে আরও উল্লেখ করা হয়, একপর্যায়ে ওই ডাকাতরা সিকিউরিটি এজেন্সির গাড়ি এবং তাদের নিজেদের গাড়ি নিয়ে পঞ্চবটের দিকে চলে যায়। কিছুদূর যাওয়ার পর সিকিউরিটি এজেন্সির গাড়ি থেকে টাকা ভর্তি ট্রাংকগুলো তাদের গাড়িতে উঠিয়ে গাড়িটি রাস্তার পাশে রেখে তাদের নিজেদের হায়েস মাইক্রোবাস নিয়ে দ্রুত পঞ্চবটির দিকে চলে যায়। দলটিতে ১০ থেকে ১২ জন ছিল, প্রত্যেকের মুখেই মাস্ক পরা ছিল।
গতকাল ঘটনার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, সিকিউরিটি এজেন্সির গাফিলতির কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি পরিকল্পিত উল্লেখ করে কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছিলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই টাকা পৌঁছে দেওয়ার জন্য যাচ্ছিল গাড়িটি।